Speech by the President of India, Shri Pranab Mukherjee on the Occasion of Launch of Akashvani Maitree Channel
Raj Bhawan, Kolkata : 23.08.2016
সমবেত সুধীজন,
1. আজ আকাশবাণী মৈত্রী চ্যানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত।এই চ্যানেলটির সূচনার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত হতে চলেছে।আকাশবাণী মৈত্রী হল আকাশবাণীর এক অভিনব প্রয়াস যা কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালিদের কাছে পৌঁছবে।
2. ভারত ও বাংলাদেশ কেবলমাত্র দুটি প্রতিবেশী দেশই নয়, জনগোষ্ঠীগত দিক থেকেও দুটি দেশ এক সূত্রে গ্রথিত।আমাদের অভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্য,সংস্কৃতি, ভাষা, ভৌগোলিক নৈকট্যর দরুণ সমগ্র উপমহাদেশে বিকাশ,শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দুটি দেশ যে ভূমিকা পালন করতে পারে সে কথা মনে রেখে ভারত, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। যে আদর্শগত মজবুত বুনিয়াদের ওপর আমাদের এই সম্পর্ক দাঁড়িয়ে আছে তা হল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আমাদের অটল বিশ্বাস এবং উদারনৈতিকতা, সাম্যবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, পরস্পরের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা।
3. আকাশবাণী মৈত্রীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে আমি বুঝতে পারছি, ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে সমস্ত বাঙালির প্রিয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে রক্ষা করা ও তা তুলে ধরার ক্ষেত্রে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের চারুকলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সঙ্গীত, খেলাধুলো এবং অভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সমৃদ্ধ এই চ্যানেল এক অভিনব প্রয়াস। আমি নিশ্চিত,এটি উভয় দেশের রেডিও শ্রোতাদের মন জয় করবে।
4. প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুটি দেশের মানুষে মানুষে সংযোগকে একটি মঞ্চ দিতে এবং দুটি দেশের মধ্যে বর্তমানের ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আত্মিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে সম্প্রচার সংস্থাগুলির বিষয়বস্তু বিনিময়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অন্য কোনও দেশের কোনও সম্প্রচার সংস্থা এর আগে এধরণের উদ্যোগ নেয় নি যেখানে দুটি প্রতিবেশী দেশের মানুষ একযোগে সম্প্রচারের বিষয়বস্তু সৃজনে এগিয়ে এসেছে। এই চ্যানেলের বিষয়বস্তু কৃষি গবেষণা,চিকিৎসা বিজ্ঞান, বিপর্যয় মোকাবিলা,শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ভিত্তিতে হওয়া উচিত,যাতে সীমান্তের উভয় দিকের শ্রোতাদের তা কাজে আসে।
5. আকাশবাণী মৈত্রী একটি অত্যাধুনিক উচ্চ শক্তি সম্পন্ন ১০০০ কিলোওয়াট DRMট্রান্সমিটারে সম্প্রচার করা হবে। মিডিয়াম ওয়েভে সমগ্র বাংলাদেশে এই অনুষ্ঠান শোনা যাবে। তাছাড়া, এর ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এটি পৌঁছে যাবে। এই অর্থে আজকের দিনটি একটি স্মরণীয় দিন। আকাশবাণী মৈত্রীর উদ্বোধন শুধু দুই বাংলার মানুষের কাছেই নয়, সমগ্র মহাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
6. আকাশবাণী ১৯৭১ সাল থেকে রেডিওপ্রেমী বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়,আকাশবাণী মৈত্রীর আগে একটি বিশেষ বাংলা পরিষেবা চালু করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঐ চ্যানেলটি এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল।
7. ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান চিরকাল এক সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের প্রাণকেন্দ্র। আমাদের সংস্কৃতি এক অনন্য মিশ্র সভ্যতা ও সংস্কৃতি।কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত বাংলা কবিতা ‘ভারততীর্থ’এ বলেছেন,এর কয়েক ছত্র আমি উদ্ধৃত করছিঃ
"কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে সমুদ্রে হল হারা
হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন
শক হুন দল, পাঠান মোগল এক দেহে হল লীন
তারা মোর মাঝে সবাই বিরাজে, কেহ নহে নহে দূর
আমার শোণিতে রয়েছে ধ্বনিতে তারই বিচিত্র সুর”।
ঐতিহাসিক বাস্তবতার দরুন রাজনৈতিক বিভাজন সত্বেও এই অঞ্চলের সব মানুষের হৃদয়ে ঐ একই সাংস্কৃতিক স্পন্দন অনুরণিত হয়।
8. আর সেটাই আশার কথা। আমাদের ভাষা, আমাদের সঙ্গীত, আমাদের সাহিত্য, আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা, আমাদের ভাগ্য, আমাদের নদী, পাহাড় পর্বত, পাখিদের কলরব- সব কিছুই আমাদের এক সূত্রে গ্রথিত করে। আকাশবাণী মৈত্রী এই অভিন্ন আশা আকাঙ্ক্ষা ও অনুভূতিকে এক নতুন অভিব্যক্তি দেবার সূচনা করল। এটি সমগ্র অঞ্চলে মৈত্রী ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করবে ও প্রকারান্তরে তা মানুষের প্রগতি ও সমৃদ্ধির সহায়ক হবে।
9. বিশ্বের সুদীর্ঘ ইতিহাসে বিভিন্ন দেশের সম্পর্ক নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে।দেশে দেশে যুদ্ধ হয়েছে। তারপর আবার সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে নতুন বন্ধুত্ব, নতুন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। ইউরোপীয় সঙ্ঘ ও একটি অভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইউরোপীয় বাজার সৃষ্টি এর অন্যতম দৃষ্টান্ত।
10. এই অঞ্চলেও অনুরূপ প্রয়াস চালানো হয়। আঞ্চলিক সহযোগিতা মজবুত করতে এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করতে দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ একজোট হয়ে দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সঙ্ঘ ‘সার্ক’ গঠন করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই অসাধারণ উদ্যোগের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে তা এখনও পুরোপুরি কাজে লাগানো যায় নি। এই সংগঠনে নতুন সজীবতা আনতে ভারত ও বাংলাদেশ একযোগে কাজ করতে পারে। আমি প্রায়ই একটা কথা বলি যে, আমরা বন্ধু বেছে নিতে পারলেও প্রতিবেশীকে বাছতে পারি না। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা চিরদিন উত্তেজনার পরিবেশে থাকতে চাই, নাকি একযোগে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই।
11. ভারত ও বাংলাদেশ সম্প্রতি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। ভারত তার অর্থনৈতিক বিকাশে বাংলাদেশকে অংশীদার করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। পারস্পরিক সদিচ্ছা ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে দুটি দেশের জনগণের নিয়মিত সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা সংযোজনের ক্ষেত্র এখন প্রস্তুত। আগামী দিনগুলিতে দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক বিকাশ, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আমাদের দুটি দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক সর্বদা এক বিশেষ স্থান অধিকার করে থাকবে।
12. সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও বাংলাদেশকে সড়ক, রেল, জলপথ ও আকাশপথে যোগাযোগ বৃদ্ধি ছাড়াও রেডিও টেলিভিশন ও অন্যান্য ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে সংযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
13. আকাশবাণী মৈত্রী তাই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির এক সঠিক মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। রেডিওর মাধ্যমে কূটনৈতিক সংযোগ বৃদ্ধির এই প্রয়াসে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমাদের অর্থনৈতিক সংযোগ ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেলে দুটি দেশই আরও সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠবে।
14. আমার বক্তব্য শেষ করার আগে,ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের এই ঐতিহাসিক ঘটনায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এটি এক স্মরণীয় মুহূর্ত। কারণ এই চ্যানেল বাংলার সংস্কৃতি তুলে ধরার এমন এক মঞ্চ যা দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি এবং শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ধন্যবাদ।
জয়হিন্দ।।